০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবি ছাত্রলীগ: অন্তঃদ্বন্দ্বে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভ থেকেই বাড়ছে সংঘাত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুইপক্ষ। এ ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদে থেকেও নেতাদের ক্ষমতা না থাকা এবং অন্তঃদ্বন্দ্বে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভ থেকেই বাড়ছে সংঘাত।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তত্বাবধায়ক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কোনও নেতাকর্মী নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই সাংগঠনিক সফরে এসে শাখার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের শেষে নতুন কমিটির দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতা শাহিনুর সরকার ডন, কাজী লিংকন, মেজবাহুল ইসলাম, দুর্জয়, নিয়াজ মোর্শেদ, নাইম ইসলাম, আশিকুর রহমান, কামরুজ্জামান রুহুলসহ আরও অনেকে।

তবে প্রায় প্রত্যেকেই নানা অভিযোগে বিতর্কিত ছিলেন। অবশেষে গত বছর ২১ অক্টোবর সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনেকে সহসভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসেন। তবে শীর্ষ না পাওয়ায় নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। ফলে ৩ দিন পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে সক্ষম হন নতুন সভাপতি বাবু ও সাধারণ সম্পাদক গালিব।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র বলছে, কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের পর থেকে নতুন কমিটিতে একটি বিভক্তির সুর দেখা দেয়। ফলে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া দায়িত্ব নিয়েই হল ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পরিবর্তে নিজের প্যানেলের নেতাকর্মীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বানান বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক গালিব। এতে পদে থেকেও ক্ষমতা হারায় হলের নেতারা। ফলে হল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে এবং দুইটি পক্ষ সৃষ্টি হয়।

গত ১১ মে মধ্যরাতে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল ছাত্রলীগের নেতা নিয়াজ মোর্শেদ ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অস্ত্রের মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতজন আহত হয়। ১৩মে রাতভর নেতাকর্মীদের ফের অস্ত্রের মহড়া দেখা যায়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহিনুর সরকার ডন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, আশিকুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুজ্জামান রুহুলকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বহিষ্কৃত নেতা নিয়াজের অভিযোগ, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এগুলো করছেন। পরবর্তী কমিটিতে দক্ষ নেতৃত্ব শূন্য করে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান। তাছাড়া কোন তদন্ত কমিটি ছাড়া এভাবে কেন বহিষ্কার করা হলো সে সম্পর্কে আমি বোধগম্য নই।

শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, সংগঠন শক্তিশালী করতে সমন্বয় জরুরি। নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বিমত থাকলে সেটা ওপেন ডিসকাশনের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। নেতাদের অন্যতম গুণ চরম সহনশীলতা। ছোটখাটো বিষয়ে বিভেদে না জড়িয়ে, বরং সংগঠনের বৃহৎ স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব বলেন, ছাত্রলীগের একপক্ষ বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। বিষয়গুলো আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করি। সার্বিক পর্যবেক্ষণ শেষে তারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা চাই না। -বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশে জেলহত্যার পুনরাবৃত্তির আশংকা ! মৃত্যু ঝুঁকিতে ফজলে করিম

রাবি ছাত্রলীগ: অন্তঃদ্বন্দ্বে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভ থেকেই বাড়ছে সংঘাত।

Update Time : ১২:৩৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুইপক্ষ। এ ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদে থেকেও নেতাদের ক্ষমতা না থাকা এবং অন্তঃদ্বন্দ্বে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভ থেকেই বাড়ছে সংঘাত।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তত্বাবধায়ক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কোনও নেতাকর্মী নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই সাংগঠনিক সফরে এসে শাখার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের শেষে নতুন কমিটির দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতা শাহিনুর সরকার ডন, কাজী লিংকন, মেজবাহুল ইসলাম, দুর্জয়, নিয়াজ মোর্শেদ, নাইম ইসলাম, আশিকুর রহমান, কামরুজ্জামান রুহুলসহ আরও অনেকে।

তবে প্রায় প্রত্যেকেই নানা অভিযোগে বিতর্কিত ছিলেন। অবশেষে গত বছর ২১ অক্টোবর সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনেকে সহসভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসেন। তবে শীর্ষ না পাওয়ায় নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। ফলে ৩ দিন পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে সক্ষম হন নতুন সভাপতি বাবু ও সাধারণ সম্পাদক গালিব।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র বলছে, কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের পর থেকে নতুন কমিটিতে একটি বিভক্তির সুর দেখা দেয়। ফলে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া দায়িত্ব নিয়েই হল ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পরিবর্তে নিজের প্যানেলের নেতাকর্মীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বানান বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক গালিব। এতে পদে থেকেও ক্ষমতা হারায় হলের নেতারা। ফলে হল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে এবং দুইটি পক্ষ সৃষ্টি হয়।

গত ১১ মে মধ্যরাতে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল ছাত্রলীগের নেতা নিয়াজ মোর্শেদ ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অস্ত্রের মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতজন আহত হয়। ১৩মে রাতভর নেতাকর্মীদের ফের অস্ত্রের মহড়া দেখা যায়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহিনুর সরকার ডন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, আশিকুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুজ্জামান রুহুলকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বহিষ্কৃত নেতা নিয়াজের অভিযোগ, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এগুলো করছেন। পরবর্তী কমিটিতে দক্ষ নেতৃত্ব শূন্য করে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান। তাছাড়া কোন তদন্ত কমিটি ছাড়া এভাবে কেন বহিষ্কার করা হলো সে সম্পর্কে আমি বোধগম্য নই।

শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, সংগঠন শক্তিশালী করতে সমন্বয় জরুরি। নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বিমত থাকলে সেটা ওপেন ডিসকাশনের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। নেতাদের অন্যতম গুণ চরম সহনশীলতা। ছোটখাটো বিষয়ে বিভেদে না জড়িয়ে, বরং সংগঠনের বৃহৎ স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব বলেন, ছাত্রলীগের একপক্ষ বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। বিষয়গুলো আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করি। সার্বিক পর্যবেক্ষণ শেষে তারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা চাই না। -বাংলাদেশ প্রতিদিন।