০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাকাত : সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সর্বদা কল্যাণমুখী সুখী, সমৃদ্ধ ও ভারসাম্যমূলক সমাজের কথা বলে, সম্পদের সুষম বণ্টনের কথা বলে, শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখে। অসহায়,অসচ্ছল ও কল্যাণমুখি সমাজ বিনির্মাণ করাই ইসলামের মুখ্য উদ্দেশ্য। আর এটি বাস্তবায়নে যাকাত প্রদান অন্যতম ভূমিকা রাখে। যাকাত ইসলামের মূল ভিত্তি গুলোর মধ্যে তৃতীয়। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে যাকাত অন্যতম। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা, পরিশুদ্ধ করা । শরিয়তের পরিভাষায় ভাষায়, সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারের নিকট অর্পণ করা। এক কথায় কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে তার নির্ধারিত পরিমাণ অংশ (২.৫ %) হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে যাকাত বলা হয়। সুনির্ধারিত অংশটি শরিয়তসম্মতভাবে আদায় না করলে গোটা সম্পদই মুমিনের জন্যে হারাম হয়ে যায়। যাকাত একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজ-রাষ্ট্রের সকল মানুষের মাঝে সমতা ফিরে আসে। ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্যের অবসান ঘটে। মনে রাখতে হবে যে, যাকাত কোন অনুদান নয় বরং এটি ধনীদের সম্পদের উপর দরিদ্র্যদের আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একটি অধিকার। যাকাতের অনেক সামাজিক আর্থ-গুরুত্ব গুরুত্ব রয়েছে।

তন্মধ্যে : দরিদ্র্যদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে: পুঁজিবাদী সমাজের দরিদ্র্যরা দিন দিন দারিদ্রতার রোষানলে পড়তে থাকে। কিন্তু যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র্যরাও স্বাবলম্বী হয়ে একসময় যাকাত আদায়ের যোগ্য হয়ে উঠে। ঈতগ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ (২.৫%) হারে যাকাতের পরিমাণ হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং সঠিকভাবে একটানা ১৫ বছর যাকাত আদায় করলে দেশে যাকাত নেওয়ার মতো কোনো মানুষই পাওয়া যাবে না। এভাবেই দরিদ্র্যরা স্বাবলম্বী হতে পারবে। সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করে : সমাজে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাথে বিত্তশালীদের বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে উভয়ের মধ্যে সর্বদা একটা তফাৎ থেকেই যায়। বিত্তবানদের যাকাত আদায়ের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। সমাজের মানুষদের মাঝে একটা আত্মিক এবং মনের বন্ধন সৃষ্টি হবে। পরস্পরের সহযোগিতা মূলক একটি সুন্দর সমাজ গ্রে উঠবে।

সমাজে বেকারত্ব দূর করে: বর্তমান দেশে বেকারত্ব অন্যতম একটি সমস্যা। যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে তার কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া যায়। যাকাতের টাকা বিক্ষিপ্ত ভাবে বন্টন না করে প্রতি বছর নির্দিষ্ট কয়েকজনকে প্রদান করে স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া, যার ফলে পরবর্তী বছরে সে আর যাকাত গ্রহণ করা লাগবে না। এক সময় দেখা যাবে সে ব্যক্তি নিজেই যাকাত প্রদান করছে। সামাজিক অন্যায়-অনাচার নির্মুল করে : অর্থের অভাব হলে মানুষ সমাজে অন্যায়-অবিচার তথা চুরি,ডাকাতি,খুন,রাহাজানি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। সমাজের সার্বিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এবং সমাজের অবকাঠামো নষ্ট হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আর্থিক অবস্থার অবস্থার উন্নতি হয়। ফলে এসব অসামাজিক কার্যক্রম থেকে সমাজের মাুনষ রক্ষা পায়।

যাকাত দারিদ্র্য বিমোচন করে: সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের অবদান অসীম। পবিত্র কুরআন মাজিদে বর্ণিত যে আট প্রকার ব্যক্তির উপর যাকাত গ্রহণ জায়েয, তারা প্রকৃত পক্ষেই হতদরিদ্র ও মিসকিন। দাতাগণ যদি পরিকল্পিত ও সঠিক ভাবে তাদের মাঝে যাকাত বন্টন করে দেয়, তাহলে সকলেই একদিন দারিদ্র মুক্ত হবে এবং সামনে থেকে নিজেই যাকাত দেয়ার উপযুক্ত হবে। যাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে: ইসলামের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো সম্পদ যেন কোনো ক্ষেত্রে একত্রীভুত ও শক্তিভূত না হয়ে যায়। সামজে এমন লোক আছে যারা তাদের উপার্জন দ্বারা নিজেদের বরণ-পোষণই আদায় করতে পারেনা। তাছাড়া সমাজে এমন লোক আছে ইয়াতিম, বিধবা, পঙ্গু যারা কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা এই সমস্ত লোকদের মৌলিক চাহিদা পূরনের জন্যই যাকাতের বিধান দিয়েছেন। সমাজের যারা ধনী, বিত্তশালী তাদের সম্পদের একাংশ এ সমস্ত অসহায় ইয়াতিম মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেয়ার বিধান দিয়েছেন। এভাবে যাকাতোর মাধ্যমে সমাজের ধনী-গরিবের বিরাজমান বৈষম্য দূর করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত আদায় করো আর বিনয়কারীদের সাথে মিলিত হয়ে বিনয় প্রকাশ করো।’ (সূরা বাকারা : ১৪৩)। ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি সৃষ্টি করে : যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের সমাজের অসহায় মানুষদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষদের মধ্যে সেতুবন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যাকাতের গুরুত্ব ব্যাপক। যাকাত একদিকে যেমন গরিব অসহায়দের সামাজিক সমস্যার অবসান করে, তেমনি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিকেও গতিশীল রাখে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় যাকাত প্রদান ও তা সঠিক বন্টনের গুরুত্ব অপরিসীম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশে জেলহত্যার পুনরাবৃত্তির আশংকা ! মৃত্যু ঝুঁকিতে ফজলে করিম

যাকাত : সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান।

Update Time : ০২:২৯:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সর্বদা কল্যাণমুখী সুখী, সমৃদ্ধ ও ভারসাম্যমূলক সমাজের কথা বলে, সম্পদের সুষম বণ্টনের কথা বলে, শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখে। অসহায়,অসচ্ছল ও কল্যাণমুখি সমাজ বিনির্মাণ করাই ইসলামের মুখ্য উদ্দেশ্য। আর এটি বাস্তবায়নে যাকাত প্রদান অন্যতম ভূমিকা রাখে। যাকাত ইসলামের মূল ভিত্তি গুলোর মধ্যে তৃতীয়। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে যাকাত অন্যতম। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা, পরিশুদ্ধ করা । শরিয়তের পরিভাষায় ভাষায়, সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারের নিকট অর্পণ করা। এক কথায় কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে তার নির্ধারিত পরিমাণ অংশ (২.৫ %) হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে যাকাত বলা হয়। সুনির্ধারিত অংশটি শরিয়তসম্মতভাবে আদায় না করলে গোটা সম্পদই মুমিনের জন্যে হারাম হয়ে যায়। যাকাত একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজ-রাষ্ট্রের সকল মানুষের মাঝে সমতা ফিরে আসে। ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্যের অবসান ঘটে। মনে রাখতে হবে যে, যাকাত কোন অনুদান নয় বরং এটি ধনীদের সম্পদের উপর দরিদ্র্যদের আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একটি অধিকার। যাকাতের অনেক সামাজিক আর্থ-গুরুত্ব গুরুত্ব রয়েছে।

তন্মধ্যে : দরিদ্র্যদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে: পুঁজিবাদী সমাজের দরিদ্র্যরা দিন দিন দারিদ্রতার রোষানলে পড়তে থাকে। কিন্তু যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র্যরাও স্বাবলম্বী হয়ে একসময় যাকাত আদায়ের যোগ্য হয়ে উঠে। ঈতগ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ (২.৫%) হারে যাকাতের পরিমাণ হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং সঠিকভাবে একটানা ১৫ বছর যাকাত আদায় করলে দেশে যাকাত নেওয়ার মতো কোনো মানুষই পাওয়া যাবে না। এভাবেই দরিদ্র্যরা স্বাবলম্বী হতে পারবে। সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করে : সমাজে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাথে বিত্তশালীদের বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে উভয়ের মধ্যে সর্বদা একটা তফাৎ থেকেই যায়। বিত্তবানদের যাকাত আদায়ের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। সমাজের মানুষদের মাঝে একটা আত্মিক এবং মনের বন্ধন সৃষ্টি হবে। পরস্পরের সহযোগিতা মূলক একটি সুন্দর সমাজ গ্রে উঠবে।

সমাজে বেকারত্ব দূর করে: বর্তমান দেশে বেকারত্ব অন্যতম একটি সমস্যা। যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে তার কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া যায়। যাকাতের টাকা বিক্ষিপ্ত ভাবে বন্টন না করে প্রতি বছর নির্দিষ্ট কয়েকজনকে প্রদান করে স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া, যার ফলে পরবর্তী বছরে সে আর যাকাত গ্রহণ করা লাগবে না। এক সময় দেখা যাবে সে ব্যক্তি নিজেই যাকাত প্রদান করছে। সামাজিক অন্যায়-অনাচার নির্মুল করে : অর্থের অভাব হলে মানুষ সমাজে অন্যায়-অবিচার তথা চুরি,ডাকাতি,খুন,রাহাজানি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। সমাজের সার্বিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এবং সমাজের অবকাঠামো নষ্ট হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আর্থিক অবস্থার অবস্থার উন্নতি হয়। ফলে এসব অসামাজিক কার্যক্রম থেকে সমাজের মাুনষ রক্ষা পায়।

যাকাত দারিদ্র্য বিমোচন করে: সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের অবদান অসীম। পবিত্র কুরআন মাজিদে বর্ণিত যে আট প্রকার ব্যক্তির উপর যাকাত গ্রহণ জায়েয, তারা প্রকৃত পক্ষেই হতদরিদ্র ও মিসকিন। দাতাগণ যদি পরিকল্পিত ও সঠিক ভাবে তাদের মাঝে যাকাত বন্টন করে দেয়, তাহলে সকলেই একদিন দারিদ্র মুক্ত হবে এবং সামনে থেকে নিজেই যাকাত দেয়ার উপযুক্ত হবে। যাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে: ইসলামের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো সম্পদ যেন কোনো ক্ষেত্রে একত্রীভুত ও শক্তিভূত না হয়ে যায়। সামজে এমন লোক আছে যারা তাদের উপার্জন দ্বারা নিজেদের বরণ-পোষণই আদায় করতে পারেনা। তাছাড়া সমাজে এমন লোক আছে ইয়াতিম, বিধবা, পঙ্গু যারা কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা এই সমস্ত লোকদের মৌলিক চাহিদা পূরনের জন্যই যাকাতের বিধান দিয়েছেন। সমাজের যারা ধনী, বিত্তশালী তাদের সম্পদের একাংশ এ সমস্ত অসহায় ইয়াতিম মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেয়ার বিধান দিয়েছেন। এভাবে যাকাতোর মাধ্যমে সমাজের ধনী-গরিবের বিরাজমান বৈষম্য দূর করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত আদায় করো আর বিনয়কারীদের সাথে মিলিত হয়ে বিনয় প্রকাশ করো।’ (সূরা বাকারা : ১৪৩)। ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি সৃষ্টি করে : যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের সমাজের অসহায় মানুষদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষদের মধ্যে সেতুবন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যাকাতের গুরুত্ব ব্যাপক। যাকাত একদিকে যেমন গরিব অসহায়দের সামাজিক সমস্যার অবসান করে, তেমনি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিকেও গতিশীল রাখে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় যাকাত প্রদান ও তা সঠিক বন্টনের গুরুত্ব অপরিসীম।