১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিত্যক্ত সবজি দিয়ে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন তৈরি ক্ষুদে বিজ্ঞানীর

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষক সন্তান ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম কলা গাছের তন্তুকে বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরির ফরমুলা আবিষ্কার করেছেন। একইসঙ্গে পঁচা বা অব্যবহৃত সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি করেছেন পঁচনযোগ্য পলিথিন।

তার দাবি এটি পরিবেশ বান্ধব এবং অনেকটা সাশ্রয়ী।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট গ্রুফ দরজা-জানালাও তৈরি করা সম্ভব।

তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।

তিনি জানান, তার আবিষ্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাধা করা য়ায়। আর সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, তাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তুর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে টাইলস তৈরি এবং আলুর শ্বেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে এনে দেখায়। পরে আমরা কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখানোর আহবান জানালে সে এই দুই পণ্য তৈরি করে। সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধিক গবেষনায় এটি ভালো কোন আবিষ্কার হতে পারে।

কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। আর তার আবিষ্কৃত এ পলিথিন পরিবেশের উপর অপচনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, তার তৈরি টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। যার মধ্যে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইডোঅক্সাইড ৬০ গ্রাম ও রেজিন ৪০ গ্রাম। সে জানায় রেজিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে যেন এটি না পঁচে এবং হাইডোঅক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করে।

পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের জন্য সে ব্যবহার করে বাজারের পরিত্যাক্ত সবজি থেকে সংগ্রহকৃত শ্বেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল। মোট দ্রবনের ২৫ শতাংশ গ্লিসারল, ২৫ শতাংশ এসিটিক এসিড ও ২৫/৩০ শতাংশ পানি ও বাকিটা সবজির শ্বেতসার।

ইতোপূর্বে সাজ্জাদুল “বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪” এ মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে তার গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

সাজ্জাদুলের বাবার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। তার বাবার পক্ষে তার গবেষণার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই তার এ কাজের উৎসাহ অর্থনৈতিক কারণে সামনের দিকে এগুচ্ছেনা। এই মেধাবী ক্ষুদে বিজ্ঞানীকে সরকার কিংবা হৃদয়বান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পৃষ্টপোষকতা করলে তার দ্বারা ভালো কিছু আবিষ্কার আশা করেন তার শিক্ষকরা।

এএইচ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশে জেলহত্যার পুনরাবৃত্তির আশংকা ! মৃত্যু ঝুঁকিতে ফজলে করিম

পরিত্যক্ত সবজি দিয়ে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন তৈরি ক্ষুদে বিজ্ঞানীর

Update Time : ০১:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষক সন্তান ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম কলা গাছের তন্তুকে বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরির ফরমুলা আবিষ্কার করেছেন। একইসঙ্গে পঁচা বা অব্যবহৃত সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি করেছেন পঁচনযোগ্য পলিথিন।

তার দাবি এটি পরিবেশ বান্ধব এবং অনেকটা সাশ্রয়ী।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট গ্রুফ দরজা-জানালাও তৈরি করা সম্ভব।

তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।

তিনি জানান, তার আবিষ্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাধা করা য়ায়। আর সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, তাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তুর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে টাইলস তৈরি এবং আলুর শ্বেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে এনে দেখায়। পরে আমরা কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখানোর আহবান জানালে সে এই দুই পণ্য তৈরি করে। সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধিক গবেষনায় এটি ভালো কোন আবিষ্কার হতে পারে।

কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। আর তার আবিষ্কৃত এ পলিথিন পরিবেশের উপর অপচনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, তার তৈরি টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। যার মধ্যে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইডোঅক্সাইড ৬০ গ্রাম ও রেজিন ৪০ গ্রাম। সে জানায় রেজিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে যেন এটি না পঁচে এবং হাইডোঅক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করে।

পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের জন্য সে ব্যবহার করে বাজারের পরিত্যাক্ত সবজি থেকে সংগ্রহকৃত শ্বেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল। মোট দ্রবনের ২৫ শতাংশ গ্লিসারল, ২৫ শতাংশ এসিটিক এসিড ও ২৫/৩০ শতাংশ পানি ও বাকিটা সবজির শ্বেতসার।

ইতোপূর্বে সাজ্জাদুল “বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪” এ মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে তার গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

সাজ্জাদুলের বাবার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। তার বাবার পক্ষে তার গবেষণার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই তার এ কাজের উৎসাহ অর্থনৈতিক কারণে সামনের দিকে এগুচ্ছেনা। এই মেধাবী ক্ষুদে বিজ্ঞানীকে সরকার কিংবা হৃদয়বান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পৃষ্টপোষকতা করলে তার দ্বারা ভালো কিছু আবিষ্কার আশা করেন তার শিক্ষকরা।

এএইচ