জীবনকে পরিপূর্ণভাবে যাপন ও উপভোগের জন্যে প্রয়োজন টোটাল ফিটনেস। শারীরিক মানসিক সামাজিক এবং আত্মিক ফিটনেসের সমন্বয় হচ্ছে টোটাল ফিটনেস। কোয়ান্টাম ৩০ বছর ধরে এ ধারণাকেই জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ করার জন্যে নিরলসভাবে কাজ করছে। আপনিও অনুশীলন করুন। অর্জন করুন টোটাল ফিটনেস।
শারীরিক ফিটনেস
শারীরিক ফিটনেস মানে শরীরের নির্দিষ্ট মাপ, ওজন ও আকার নয়। এই ফিটনেস নির্ভর করে একজন মানুষ ক্লান্তিহীনভাবে কতক্ষণ কাজ করতে পারেন, তার ওপর। তাই দেহের আকার-ওজনের ফ্যান্টাসি থেকে মুক্ত হয়ে গুরুত্ব দিন আপনার এনার্জি লেভেল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দিকে।
সেইসাথে সুস্বাস্থ্য বা শারীরিক ফিটনেসের দায়িত্ব ডাক্তার ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের হাতে না দিয়ে নিজেকে নিতে হবে। ইচ্ছামতো চলব আর অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাব—এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি নয়।
মনে রাখতে হবে, ছোট ছোট যত্ন যেমন সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে তেমনি ছোট ছোট অযত্ন-অবহেলার কারণেই সৃষ্টি হয় রোগবালাই।
তাই আসুন, নিজের দেহের প্রতি মনোযোগী হই এবং মেনে চলি কিছু সহজ সূত্র…
১. নিয়মিত দমচর্চা বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। বাড়বে দেহ-মনের সুস্থতা।
২. প্রাকৃতিক খাবার ও পরিমিত খাদ্যগ্রহণে অভ্যস্ত হোন। দিনের শুরুতে ভরপেট খান, দুপুরে তার চেয়ে কম এবং রাতে আরো কম।
৩. বর্জন করুন রাত জাগার অভ্যাস। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জেগে ওঠার অভ্যাস গড়ুন। রাত ১১টার পর সব ধরনের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন।
৪. দিনে অন্তত ৩০ মিনিট সময় রাখুন যোগব্যায়াম ও হাঁটার জন্যে।
৫. দেহের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করা হোক প্রতিদিনের অভ্যাস।
৬. দিনের কাজগুলো যতটা সম্ভব নির্দিষ্ট সময়ে করতে সচেষ্ট হোন।
মানসিক ফিটনেস
মানসিক ফিটনেসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দৃষ্টিভঙ্গি বা ভাবনা। কারণ আমরা যা ভাবি আমরা তা-ই। ভাবনাকে যত বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল রাখা সম্ভব হবে, মানসিক ফিটনেস তত বাড়বে।
প্রধান দুটো মানদণ্ড
প্রথমত, নিন্দা ও প্রশংসা—দুটোকেই আপনি সহজভাবে নিতে পারেন কিনা। হাততালি বা কটাক্ষ-কটুকথা তা যদি আপনার কাজে কোনো প্রভাব বিস্তার না করে, তাহলে আপনি মানসিকভাবে ফিট।
দ্বিতীয়ত, যে-কোনো পরিস্থিতিতে আপনি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা। প্রতিকূল সময়ে উত্তেজিত হয়ে রি-এক্ট করে ফেলেন, না সহজভাবে পরিস্থিতি সামলে নিতে পারেন? বিরক্তিকে জয় করে করণীয় কাজটি করতে পারাই মূলত মানসিক ফিটনেস।
সেইসাথে আপনি গুছিয়ে কাজ করতে পারেন কিনা। গোছানো মানে পরিকল্পিত কাজ। সমাধা করা এবং কাজ গোছানো কিন্তু এক নয়। কাজ তুলে ফেলতে পারে অনেকেই, কিন্তু সবাই গুছিয়ে কাজ করতে পারে না।
যেমন, দৈনন্দিন কাজের উপকরণগুলো গুছিয়ে রাখলে, প্রত্যেকবার খোঁজাখুঁজি করতে হয় না। ফলে সময় ও শ্রম বাঁচে। কাজে আসে সচ্ছন্দ গতি ও মনোযোগ।
সামাজিক ফিটনেস
সামাজিক ফিটনেসের প্রথম শর্ত হলো সামাজিক হওয়া। অর্থাৎ সমাজের অংশ হওয়া। ভার্চুয়াল বা অলীক জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে সবার সাথে চলতে পারা।
জড়তা ভেঙে শুরু করুন
১. পরিচিত অপরিচিত বড় ছোট নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দিন। নিজে উদ্যোগী না হয়ে যে ব্যক্তি অন্যদের কাছ থেকে সালামের প্রত্যাশা করেন, তিনি সোশ্যালি আনফিট।
২. বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত দেখা করুন।
৩. সম্পর্কের মাঝে দেয়াল না তুলে মমতার সেতু গড়ুন।
৪. বাড়ির চারপাশে ৪০ ঘরে প্রতিবেশীদের সাথে একাত্ম হোন।
৫. আস্থাভাজন ও নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ হোন যিনি সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকেন।
আত্মিক ফিটনেস
‘একটি প্রদীপ যেমন আগুন ছাড়া প্রজ্বলিত হতে পারে না, তেমনি আত্মিক শূন্যতা নিয়ে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না।’—কথাটি হাজার বছর আগে বলে গেছেন মহামতি বুদ্ধ। আজ এই তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে ঠাসা পৃথিবীর বড় বড় চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা একই কথা বলছেন।
শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসের মাপকাঠিতে জীবন্ত থাকাই বেঁচে থাকা নয়। অর্থবিত্ত খ্যাতি ও সাফল্যে ভরপুর জীবনও পরিপূর্ণ জীবন নয়। পণ্য পদমর্যাদা প্রাচুর্য—প্রতিটি প্রত্যাশা পূরণের পরও যে শূন্যতা আর হাহাকার, সেটি দূর করতেই প্রয়োজন আত্মিক উন্নয়ন।
আত্মিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তিই হলো আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে সমাজকেন্দ্রিক হওয়া। শুধু নিজের জন্যে নয়, চারপাশে সবার জন্যে বাঁচা, সবার কথা ভাবা।
আত্মিকভাবে ফিট হতে হলে
১. কারো কাছে কোনোরকম ঋণ রাখা যাবে না। যার যা প্রাপ্য—ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ থেকে শুরু করে আর্থিক ঋণ সবই পরিশোধ করতে সচেষ্ট হোন।
২.মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন।
৩. শাশ্বত ধর্মের সত্যিকার জ্ঞানে জ্ঞানী হোন এবং তা অনুসরণ করুন।
৪.নিজের কাজ নিজে করুন এবং পরিবারের কাজেও সহযোগিতা করুন। কোনো কাজকেই ছোট মনে করবেন না।
৫. ক্ষমার মানসিকতা গড়ে তুলুন।
৬.অন্যের প্রতি সমব্যথী হোন।
৭. সৃষ্টির কল্যাণে নিজের মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করুন।
এমএম//