আসামি ধরতে গিয়ে প্রকাশ্যে নারীর কপালে পিস্তল ঠেকানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে প্রবাসীকে ধরতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মারধর থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ-শিশু, এমনকি নারীরাও। আতঙ্ক ছড়াতে ছোঁড়া হয় ফাঁকা কয়েক রাউন্ড গুলি।
এ ঘটনায় জেলা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৩ কার্য দিবসে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের মামলা হয়। এতে অভিযোগ আনা হয়, নুরুল ইসলাম সৌদি আরব থেকে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি।
এ ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় গত শুক্রবার বিকাল ৫টায় প্রবাসী নুরুল ইসলাম বাড়িতে আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ধরতে সাদা পোশাকে অভিযানে যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিমসহ আরও কয়েকজন।
এসময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে তার ভাতিজার সুন্নতে খৎসার অনুষ্ঠান চলছিল। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একদল লোক নুরুলকে খুঁজতে বাসায় আসে। তারা তাকে না পেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এসময় অনুষ্ঠানে আসা বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে প্রবাসীর স্ত্রী বন্যার কপালে প্রকাশ্যে পিস্তল তাঁক করতে দেখা যায় সাদা পোশাকে আসা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিমকে।
ঘটনার সময় উপস্থিত নুরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, সাদা পোশাকে যাওয়া লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করেই তার ভাইকে খুঁজতে শুরু করে। ভাই বাড়িতে নেই বলা হলেও তারা মানতে নারাজ। এ সময় সাদা পোশাকে আসা লোকজন নুরুল ইসলামের স্ত্রী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করে। নিশাত নামের নয় বছরের এক শিশুও তাদের মারধর থেকে রক্ষা পায়নি। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, সাদা পোশাকে আসা লোকজন পিস্তল তাঁক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাও আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে খোসা কার।
নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, প্রবাসে আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যবসায়ীক অংশীদার না করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খাৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় ৫-৬ জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছ থেকে আলমারির চাবি নেয়। এ সময় তারা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের ঘরে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকাসহ গলায় থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয় তারা। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয় এবং সুন্নতে খাৎনা করা ভাতিজাকে থাপ্পড় মারে। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম বলেন, বাদী পক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়ি চিল্লাফাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে তারা। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। আমার হাতে পিস্তল ছিল, তবে কারো দিকে তাঁক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামি ধরা সেহেতু সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশনে যাইনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, পোশাক ছাড়া অভিযানে যাওয়া আইনসম্মত নয়।
পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো অফিসার যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। বিষয়টির গভীরভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এএইচ