০১:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আধুনিক বিশ্ব ঝুঁকছে ডিজিটাল ডায়েটিংয়ের দিকে, আপনার করণীয়।

ডিজিটাল ডায়েটিং হলো এক ধরণের নিয়ন্ত্রণ, তবে সেটা খাবারের নয়। বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসের পেছনে আমরা যে অঢেল সময় ব্যয় করি তা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণই হলো ডিজিটাল ডায়েটিং।

স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ই-রিডারস, গেমিং কনসোল, স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ট্র্যাকার, হার্ট রেট মনিটর, ডিজিটাল ক্যামেরা, জিপিএস, ডিজিটাল ভয়েস এসিস্ট্যান্টস- স্মার্ট ডিভাইজের তালিকা নেহায়েত ছোট নয়। এখনকার সময় এসব ডিভাইস ব্যবহার করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ কম-বেশি সবাই-ই। অনেকের তো দিন পারই হয় স্মার্টফোনে।

ডিজিটাল ডিভাইসের এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার তৈরি করছে আসক্তি যার পরিণাম দেহমনের স্বাস্থ্যহানী। বিজ্ঞানীরা তাই এখন জোর দিয়ে বলছেন ডিজিটাল ডায়েটিং-এর কথা। যার মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে আমাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সচেতনভাবে ডিজিটাল কন্টেন্ট ও স্ক্রীণ-টাইম নিয়ন্ত্রণ।

ডিজিটাল ডায়েটিং’র লক্ষ্য কিন্তু ডিভাইসের ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিহার নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির কৌশলগত এবং মননশীল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ যাতে ব্যবহারকারীর কল্যাণ নিশ্চিত হয়। ব্যাপারটা অনেকটা ‘সাপ মরবে কিন্তু লাঠি ভাঙবে না’র মতো!

যেহেতু ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপ দ্রুত বিকশিত হচ্ছে তাই সময় এসেছে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বার্থের সাথে ডিজিটাল অস্তিত্বের সংঘর্ষ এড়িয়ে একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে আসা। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ডায়েটিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বে একটি স্বাস্থ্যকর ও প্রতিশ্রুতিশীল কৌশল হিসাবে প্রমাণীত হয়েছে।

ডিজাটাল ডায়েটিং যেসব সুফল দিতে পারে অপ্রয়োজনীয় তথ্যের প্লাবন রোধ ডিভাইস আসক্তির অন্যতম নেতিবাচক দিক হলো অপ্রয়োজনীয় তথ্যে ভারাক্রান্ত হয়ে যাওয়া। ফলাফল-মানসিক অবসাদ, মনোযোগ হ্রাস। অপ্রয়োজনীয় তথ্যের প্লাবন রোধে তাই সচেতন নিয়ন্ত্রণ জরুরী। এতে মন পাবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, চিন্তাভাবনা হবে স্বচ্ছ।

অত্যধিক স্ক্রীন টাইম উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার কারণ। ডিজিটাল ডায়েটিং তা রোধ করে। ব্যাক্তি অনলাইনে কি দেখছেন, পড়ছেন, শুনছেন, করছেন সে বিষয়ে সচেতনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপর নাম ডিজিটাল ডায়েটিং। যা ইতিবাচকতা, কল্যাণচিন্তা তথা মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে থাকা স্থূলতা, মাংসপেশী, হাড় সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি করে। ডিজিটাল ডায়েটিং স্ক্রিন টাইম সীমিত করে ব্যায়াম, মেডিটেশন চর্চা, সামাজিক যোগাযোগের মত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে উৎসাহিত করে।

স্মার্ট ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। ডিজিটাল ডায়েটিং, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে, ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে।

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সিংহভাগ জুড়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া। যার অবধারিত ফলাফল সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি। অন্যদিকে ডিজিটাল ডায়েটিং বাস্তব যোগাযোগ, সংযোগ, সুস্থ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতিবাচক, সমমর্মী সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিতে অবদান রাখে।

নিজের সময়, মেধা, মনোযোগ প্রযুক্তি-দানবের হাতে তুলে না দিয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রণে রাখার সুস্পষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন।

দিনে কতটুকু সময় কী উদ্দেশ্যে ডিভাইস ব্যবহার করবেন (অফিসের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, বিনোদন, যোগাযোগ) তা নির্দিষ্ট করুন।

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি থেকে পুরোপুরি দূরে থাকুন। সেসময় বাস্তব পারিবারিক, সামাজিক যোগাযোগ, মেডিটেশন, আত্মযত্নায়নে ব্যয় করুন।

দিনে কয়েক ঘন্টা, সপ্তাহে একদিন, ছুটির সময়ে আরো বেশি দিন সচেতনভাবে ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।

অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া/ইমেইল একাউন্ট ফলো/সাবস্ক্রাইব করা থেকে বিরত থাকুন। ইতিমধ্যে করে থাকলে সেগুলো আনফলো/আন-সাবস্ক্রাইব করুন। অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং/ নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।

ঘুমাতে যাবার অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে যে-কোনো স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

এমন অভ্যাস কিংবা শখ চর্চা করুন যাতে ডিভাইসের ব্যবহার প্রয়োজন হবে না। প্রিন্টেড বই পড়া, বাগান করা, খেলাধুলা, ব্যায়াম চর্চা, বঞ্চিত-দুস্থদের সেবা, যে-কোনো ধরণের শিল্প চর্চা বেছে নিতে পারেন।

ডিভাইস যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করুন। সর্বোপরি, প্রযুক্তি-দানবের বিভিন্ন মোহময় ফাঁদ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

এমএম//

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশে জেলহত্যার পুনরাবৃত্তির আশংকা ! মৃত্যু ঝুঁকিতে ফজলে করিম

আধুনিক বিশ্ব ঝুঁকছে ডিজিটাল ডায়েটিংয়ের দিকে, আপনার করণীয়।

Update Time : ০২:৩৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

ডিজিটাল ডায়েটিং হলো এক ধরণের নিয়ন্ত্রণ, তবে সেটা খাবারের নয়। বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসের পেছনে আমরা যে অঢেল সময় ব্যয় করি তা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণই হলো ডিজিটাল ডায়েটিং।

স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ই-রিডারস, গেমিং কনসোল, স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ট্র্যাকার, হার্ট রেট মনিটর, ডিজিটাল ক্যামেরা, জিপিএস, ডিজিটাল ভয়েস এসিস্ট্যান্টস- স্মার্ট ডিভাইজের তালিকা নেহায়েত ছোট নয়। এখনকার সময় এসব ডিভাইস ব্যবহার করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ কম-বেশি সবাই-ই। অনেকের তো দিন পারই হয় স্মার্টফোনে।

ডিজিটাল ডিভাইসের এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার তৈরি করছে আসক্তি যার পরিণাম দেহমনের স্বাস্থ্যহানী। বিজ্ঞানীরা তাই এখন জোর দিয়ে বলছেন ডিজিটাল ডায়েটিং-এর কথা। যার মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে আমাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সচেতনভাবে ডিজিটাল কন্টেন্ট ও স্ক্রীণ-টাইম নিয়ন্ত্রণ।

ডিজিটাল ডায়েটিং’র লক্ষ্য কিন্তু ডিভাইসের ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিহার নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির কৌশলগত এবং মননশীল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ যাতে ব্যবহারকারীর কল্যাণ নিশ্চিত হয়। ব্যাপারটা অনেকটা ‘সাপ মরবে কিন্তু লাঠি ভাঙবে না’র মতো!

যেহেতু ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপ দ্রুত বিকশিত হচ্ছে তাই সময় এসেছে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বার্থের সাথে ডিজিটাল অস্তিত্বের সংঘর্ষ এড়িয়ে একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে আসা। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ডায়েটিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বে একটি স্বাস্থ্যকর ও প্রতিশ্রুতিশীল কৌশল হিসাবে প্রমাণীত হয়েছে।

ডিজাটাল ডায়েটিং যেসব সুফল দিতে পারে অপ্রয়োজনীয় তথ্যের প্লাবন রোধ ডিভাইস আসক্তির অন্যতম নেতিবাচক দিক হলো অপ্রয়োজনীয় তথ্যে ভারাক্রান্ত হয়ে যাওয়া। ফলাফল-মানসিক অবসাদ, মনোযোগ হ্রাস। অপ্রয়োজনীয় তথ্যের প্লাবন রোধে তাই সচেতন নিয়ন্ত্রণ জরুরী। এতে মন পাবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, চিন্তাভাবনা হবে স্বচ্ছ।

অত্যধিক স্ক্রীন টাইম উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার কারণ। ডিজিটাল ডায়েটিং তা রোধ করে। ব্যাক্তি অনলাইনে কি দেখছেন, পড়ছেন, শুনছেন, করছেন সে বিষয়ে সচেতনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপর নাম ডিজিটাল ডায়েটিং। যা ইতিবাচকতা, কল্যাণচিন্তা তথা মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে থাকা স্থূলতা, মাংসপেশী, হাড় সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি করে। ডিজিটাল ডায়েটিং স্ক্রিন টাইম সীমিত করে ব্যায়াম, মেডিটেশন চর্চা, সামাজিক যোগাযোগের মত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে উৎসাহিত করে।

স্মার্ট ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। ডিজিটাল ডায়েটিং, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে, ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে।

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সিংহভাগ জুড়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া। যার অবধারিত ফলাফল সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি। অন্যদিকে ডিজিটাল ডায়েটিং বাস্তব যোগাযোগ, সংযোগ, সুস্থ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতিবাচক, সমমর্মী সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিতে অবদান রাখে।

নিজের সময়, মেধা, মনোযোগ প্রযুক্তি-দানবের হাতে তুলে না দিয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রণে রাখার সুস্পষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন।

দিনে কতটুকু সময় কী উদ্দেশ্যে ডিভাইস ব্যবহার করবেন (অফিসের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, বিনোদন, যোগাযোগ) তা নির্দিষ্ট করুন।

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি থেকে পুরোপুরি দূরে থাকুন। সেসময় বাস্তব পারিবারিক, সামাজিক যোগাযোগ, মেডিটেশন, আত্মযত্নায়নে ব্যয় করুন।

দিনে কয়েক ঘন্টা, সপ্তাহে একদিন, ছুটির সময়ে আরো বেশি দিন সচেতনভাবে ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।

অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া/ইমেইল একাউন্ট ফলো/সাবস্ক্রাইব করা থেকে বিরত থাকুন। ইতিমধ্যে করে থাকলে সেগুলো আনফলো/আন-সাবস্ক্রাইব করুন। অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং/ নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।

ঘুমাতে যাবার অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে যে-কোনো স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

এমন অভ্যাস কিংবা শখ চর্চা করুন যাতে ডিভাইসের ব্যবহার প্রয়োজন হবে না। প্রিন্টেড বই পড়া, বাগান করা, খেলাধুলা, ব্যায়াম চর্চা, বঞ্চিত-দুস্থদের সেবা, যে-কোনো ধরণের শিল্প চর্চা বেছে নিতে পারেন।

ডিভাইস যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করুন। সর্বোপরি, প্রযুক্তি-দানবের বিভিন্ন মোহময় ফাঁদ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

এমএম//